ঝিনাইদহে কাজীর সীল সাক্ষর জালিয়াতি করে বিয়ে!
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৯ এএম | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৯ এএম
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সরকারি নিকাহ রেজিস্ট্রারের (কাজী) সীল ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে একাধিক বিয়ে পড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় কালীগঞ্জ উপজেলার অনুমানপুর দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার আব্দুল লতিফ ও মালিয়াট ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ সোলাইমান হোসেনের নামে আদালতে মামলা করেছেন প্রতারণার শিকার এক ভুক্তভোগী। মামলা নম্বর- কালীগঞ্জ সিআর-৮২৯/২৪। অভিযোগ উঠেছে, কালীগঞ্জের মালিয়াট ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ সোলাইমান হোসেনের সীল ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে এলাকায় একাধিক বিয়ে পড়িয়েছেন অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ। সীল ও স্বাক্ষর জালিয়াতি ছাড়াও ভুয়া নিকাহনামা সরবরাহ ও নিকাহনামায় উল্লেখ করা দেনমোহরের পরিমাণ টেম্পারিংয়ের অভিযোগ উঠেছে আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে। মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার জিয়ালা গ্রামের মোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে মিজানুরের সাথে ২০১৫ সালে কালীগঞ্জের মালিয়াট ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের আফিয়া বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে দাম্পত্য কলহের কারণে ২০১৭ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর ২০১৮ সালে মিজানুর ও আফিয়া পারিবারিক ভাবে সমঝোতা ও সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আবারও দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। বিয়ে পড়ান কালীগঞ্জের অনুপমপুর দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল লতিফ।
ওই সময় নিকাহ রেজিস্ট্রার সোলাইমান হোসেন আব্দুল লতিফকে নিকাহ রেজিস্ট্রি করার জন্য দায়িত্ব দিয়ে বিবাহ অনুষ্ঠান থেকে বিদায় নেন। পরে আব্দুল লতিফ বিয়ে রেজিস্ট্রি’র কাজ সম্পন্ন করেন। এজাহারে আরও বলা হয়েছে, বিয়ের পর মিজানুর রহমান তার স্ত্রী আফিয়াকে ১০ লাখ টাকার যৌতুক দাবি করে চাপ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে আফিয়া খাতুন দুই সন্তান নিয়ে পিতার বাড়িতে চলে আসেন এবং আদালতে মিজানুরের বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করেন। মামলা দায়েরের পরে আফিয়া খাতুন নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) সোলাইমান হোসেনের সঙ্গে নিকাহনামার নকল কপি নেয়ার জন্য যোগাযোগ করেন। পরে আফিয়া খাতুন কাজী সোলাইমানের বাসায় নিকাহনামার নকল আনতে গিয়ে সেখানে আব্দুল লতিফকেও পেয়ে যান। ওই সময় আফিয়া খাতুন তার নিকাহনামার কপি চাইলে কাজী সোলাইমান হোসেন ও আব্দুল লতিফ তাকে জানান, আফিয়া-মিজানুর দম্পতির কোনো বিয়ে তারা রেজিস্ট্রি করেননি। এমনকি ওই বিয়ে তারা যে পড়িয়েছেন, সেটিও তারা অস্বীকার করেন। এ ঘটনায় নানা ভাবে সমাধানের চেষ্টা করলেও মালিয়াট ইউনিয়নের কাজী ওই গৃহবধূর বিয়ে পড়াননি মর্মে প্রত্যায়ন পত্র দেন। পরে আব্দুল লতিফের কাছে নিজের বিয়ের কাবিননামা চান ভুক্তভোগী গৃহবধূ। এসময় আব্দুল লতিফ তা না দিয়ে উল্টো ওই নারীকে হুমকি ধামকি দেন।
এ ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে মালিয়াট ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার সোলায়মান হোসেন বর মিজানুর রহমানের কাছে লিখিত প্রত্যয়নপত্র মারফত জানান, ‘মিজানুর-আফিয়া’ দম্পতির বিয়ে তিনি পড়াননি। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ভুক্তভোগী নারীকে আব্দুল লতিফ যে নিকাহনামা সরবরাহ করেছিলেন, তার স্বাক্ষর ও সীল অস্বীকার করছেন নিকাহ রেজিস্ট্রার মো. সোলায়মান হোসেন। এ নিয়ে শিক্ষক আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে সীল ও স্বাক্ষর জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ করেছেন ওই নারী। একই অভিযোগে মামলার আসামি হয়েছেন কাজী মো. সোলাইমান হোসেনও। সিনিয়র জুডিশ্যল ম্যাজিস্ট্রেট কালীগঞ্জ আমলী আদালতে মামলাটি চলমান রয়েছে। বিয়ের সাক্ষী সদর উপজেলার মধুহাটী ইউনিয়নের জিয়ালা গ্রামের লুৎফর রহমান ও চান্দুয়ালি গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, তারা বিয়ের সময় উপিস্থত ছিলেন। ছেলে মেয়ের বিয়ে পড়ান আব্দুল লতিফ। দ্বিতীয় বিয়ের দেনমোহর ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিল বলেও সাক্ষিরা দাবী করেন। মামলার পর আদালতের আদেশে ঘটনাটির তদন্ত করছেন ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিআইবি)। পিবিআই’র ওসি নাসির উদ্দিন রোববার জানান, মিজানুর-আফিয়া দম্পতি একাধিকবার নিজেরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তাদের একটি সন্তান অন্ধ। যে কারণে শেষবার তাদের বিয়েতে নাকি দেনমোহর ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু নিকাহ রেজিস্ট্রার যে নিকাহনামা দিয়েছেন, তাতে নাকি আড়াই লাখ টাকা উল্লেখ করা আছে। এটা নিয়েই ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা দিয়েছেন আফিয়া খাতুন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে অভিযোগ অস্বীকার করে কাজীর সহকারি আব্দুল লতিফ বলেন, মিজানুর-আফিয়ার বিয়ে আমি পড়িয়েছিলাম। কিন্তু কাজী সাহেব ব্যস্ত থাকায় আমাকে নিকাহনামা লেখার দায়িত্ব দিয়ে ওইদিন চলে যান। আমি নিকাহনামা লিখেছিলাম। বিয়ের কাবিননামায় দেনমোহর ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু পরে কাজী সাহেব একটি পক্ষের সাথে যোগসাজশ করে ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেনমোহর দেখিয়েছে। কাজী সাহেব আমাকে ফাঁসিয়েছেন। নিকাহ রেজিষ্ট্রার কাজী মোঃ সোলাইমান হোসেন বলেন, মিজানুর-আফিয়ার বিয়ে আমি পড়ায়নি। কোনো বিয়ে রেজিস্ট্রিও করিনি। আমার সীল-স্বাক্ষর জাল করে মাদ্রাসা শিক্ষক আব্দুল লতিফ এই অপকর্ম করেছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেট্রোরেল লাইনের আশপাশে ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ
চলতি বছর দেশে স্বর্ণের দাম পরিবর্তন হয়েছে ৬২ বার
সচিবালয়ের পুড়ে যাওয়া ভবন ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব : ইডেন গণপূর্ত বিভাগ
বড় রানে শুরু বিপিএল
ফেনীতে বিএনপি নেতা মজনুর ১০ হাজার কম্বল বিতরণ
পরিস্থিতি শান্ত হলে করিডোর খুলে দেয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
তালতলীতে ওসির বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে ট্রাক ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ
দৌলতপুরে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত
মির্জাপুরে শীতার্তদের ঘুম থেকে জেগে তুলে ইউএনও’র কম্বল বিতরণ
গাজীপুরে কারখানার ওয়েস্টেজ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষ গুলি আহত ৫
এবার ১২ সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব তলব করলো বিএফআইইউ
মিথ্যা সাজা খেটেও দেশ থেকে পালায়নি বেগম জিয়া: এবিএম মোশাররফ হোসেন
জুলাই বিপ্লবের ‘ঘোষণাপত্র’ ঘিরে আড়াই লাখ মানুষ জমায়েতের পরিকল্পনা
ফরিদপুর সড়ক দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু
৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি
৪৩তম বিসিএসের নতুন প্রজ্ঞাপন, বাদ পড়লেন আরও ১৬৮ জন
বাগেরহাট টেলিভিশন জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারন সভা অনুষ্ঠিত
বর্ষসেরার লড়াইয়ে হেডের সঙ্গে রুট-ব্রুক ও বুমরাহ
নরসিংদী আদালত প্রাঙ্গনে হত্যা মামলার আসামী ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা, এস.আই আহত
রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী থাকবে : বাণিজ্য উপদেষ্টা